Header Ads

কবি মোঃ মোহাইমিনুল ইসলাম

জন্ম: জুনিয়র পল্লী কবি মোঃ মোহাইমিনুল ইসলাম ১৯ জুন ১৯৯১ ইং সনে বরিশাল জেলার বানারীপাড়া উপজেলাধীন মলুহার গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর সম্মানিত পিতা জনাব মোঃ দেলোয়ার হোসেন (মিলন) একজন দলিল লেখক ছিলেন, ব্যক্তিগত জীবনে তিনি অত্যন্ত ধর্মপরায়ন ছিলেন। 

শিক্ষাজীবন: কবি সাহেব প্রাথমিক শিক্ষা লাভ করেন রাজধানীর কেরানীগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী ৬৬ নং নয়া শুভাঢ্যা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে। অত:পর তিনি জামিয়া আরাবিয়া চাঁনমিয়া  ওহাবুল উলুম মাদরাসা থেকে পবিত্র কুরআন হিফয করেন। পরবর্তীতে ঐতিহ্যবাহী জামিয়া কোরানিয়া আরাবিয়া লালবাগ মাদরাসায় হিফয শুনানি করেন (২০০৮ ইং)। ২০১৩ ইং সনে চামী মোসলিমিয়া দাখিল মাদরাসা থেকে কৃতিত্বের সাথে দাখিল পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন (পিরোজপুর)। আলিম অধ্যয়ন করেন দেশের অন্যতম সেরা ধর্মীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ঝালকাঠি এন এস কামিল মাদরাসায়। ফাযিল (স্নাতক) সম্পন্ন করেন ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের আওতাধীন মলুহার ইসলামিয়া ফাযিল মাদরাসা থেকে (বরিশাল)। কামিল (এমএ) অধ্যয়ন করেন দেশের শীর্ষ স্থানীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ঝালকাঠি এন এস কামিল মাদরাসায়।

কর্ম জীবন: মাওলানা কবি মোহাইমিনুল ইসলাম বছারাধিক কাল রাজধানীর ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল স্কুল এন্ড কলেজের ধর্মীয় শিক্ষক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। অত:পর ২০১৯ ইং সনে ঝালকাঠির নেছারাবাদ কমপ্লেক্স ট্রাস্টে যোগদান করেন। বর্তমানে নেছারাবাদ কমপ্লেক্স ট্রাস্ট এর আওতাধীন বাংলাদেশ ফোরকানিয়া বোর্ডের সহকারী পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
কবি সাহেবের কবিতা লেখার হাতে খড়ি শুরু হয়েছিল কৈশোরেই। কবিতা লেখার সে ধারাবাহিকতা আজও চলমান। কবিতার পাশাপাশি তিনি নাটক, গল্প, সঙ্গীত ও ছড়া লেখেন। সিলেট সাহিত্য পরিষদ কর্তৃক কবি সাহেবকে তাঁর ‘ডালিম গাছের তলে’ শীর্ষক কবিতার জন্য ‘জুনিয়র পল্লী কবি’ উপাধিতে ভূষিত করা হয়।
কবি সাহেব খুবই সাদা-মাটা জীবন যাপন করেন। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি বিবাহিত এবং দুই কন্য সন্তানের জনক। আমি তাঁর নেক হায়াত ও উজ্জ্বল ভবিষ্যত কামনা করছি।  

পল্লীকবি জসিম উদ্দিনকে উৎসর্গিত কবিতা
ডালিম গাছের তলে
--------------------------- মূর্খকবি (আঃ মোহাইমিন)
আয়রে আমার শেষ রত্ন দেখি তোরে প্রান ভরে,
দাদুরে দেখিতে গুড্ডু ওরে এলি এদ্দিন পরে।

পাকা চুল আর চামড়া দেখিয়া হাসছিস তুই বেশ,
যৌবনে মোর মাথায় ছিল৷ ঘন আর কালো কেশ।

এসোগো হাটিয়া মোদের কালের কিছু কথা আজ বলি,
শুনিও নাতি দিল লাগায়ে কর্ন দুটিকে খুলি।

সুবেহ সাদেক ঘুম ভাঙ্গিতাম মোদের বাল্য কালে,
গ্রীষ্ম শীতেও ধরেছি জামাত অজুটা করিয়া খালে।

নামায শেষে কায়দা লইয়া মক্তবেতে দৌড়,
প্রভাত বাতাসে জুড়াইতো প্রান করিতাম খুশি শৌড়।

শীতের দিনে খেজুর গাছে ঝুলতো রসের হাড়ি,
তাই লইয়া দোস্তেরা সব করিতাম কাড়াকাড়ি।

হাসছো তুমি অবাক হয়ে আমার বাল্য শুনি,
খেজুরের রসে ভরছে হাড়ি যাদুঘরে আজ জানি।

আলিফ,বা,তা, হইলে পড়া আসিতাম ফের বাড়ি,
পান্তার সাথে নারিকেল, গুড় খাইতাম পেট ভরি।

ছিলনা বাজান ধনি- মহাজন,যাইবো পাঠশালাতে,
লাঙ্গল, বলদ লইয়া তাইতো যাইতাম তব ক্ষেতে।

বলিত বাজানে ওরে বাপধন,গরিবী কপাল পোড়া,
লেহাপড়া হুদা জমিদার গো-ই, করুক শিক্ষা ওরা।

তখন থেকেই বাজানের সাথে ধানের জমিন তোলা,
বৈশাখ মাসে ভরিত উঠান, ভরিত ধানের গোলা।

বদন ছিল লোহার মতন বাঘের মতন বল,
হা- ড়ু- ড়ু খেলায়ে যাইতো জিতিয়া ছিলনা এমন দল।

ছিলনা তখন বিজলী বাতি সিনেমা ও থিয়েটর,
যাত্রাপালা, পুতুল নাচেই আনন্দ হুল্লর।

গরু মাঠে দিয়া গাছের নিচে দিতাম বংশি টান,
তাইনা শুনিয়া হইলো উতলা তোমার দাদির প্রান।

দেখিলো বাজানে দূর হইতে কোন এক দুপুরে,
বলিয়া কথা শশুরের লগে এনে দিল তারে ঘরে।

প্রেম বাতাসে বিয়া হইলেও শিশু মন ছিল তার
পারিলনা দিতে পুতুলের বিয়ে বলিতসে বার বার।

হাসিসনারে গুড্ডু আমার দাদির কিচ্ছা শুনে,
দেখতিস যদি গপ্পের কালে, ভাসতি খুশির বানে।

এমন করিয়া খুশি আনন্দে কাটিল কয়েক সাল,
আসিলো ধরায় তোর বাপজি ফজরের আগেকাল।

সেহরি নাখাই দৌড়ে গেলাম মসজিদেরি পানে,
মুয়াজ্জিন আসি শুনালো আজান,তোর বাপজির কানে।

কত পরিতোষ তোর বুড়ো মা'র দেখিয়া নাতির মুখ,
ভর করিলো কুড়ে ঘরে মোর, দুনিয়ার যত সুখ।

মেয়াসাবে মোর পাইয়া খবর উজান তলি হতে,
আনিলো গোল্লা রসেতে চুবানো হাড়ি ভরে দুই হাতে।

শাশুড়ীও সাথে আসিলো দেখিতে মেয়ে আর নাতিটারে,
সুখের জোয়ার বইছে যেন আমার কুড়ের ঘরে।

তখনো সুযোগ মেলেনি গাঁয়ে যাইবে দুলাল পাঠে,
আমার সাথে লাঙ্গল লইয়া তাইতো চলিল মাঠে।

মাস চলে যায়, বছর বিদায়, বড় হয় তোর বাজি,
মনে মনে ভাবি এইবার তবে আনিতে হইবে কাজী।

একদা নাঁয়ে ধান ভরিয়া বাইয়া চলিনু হাটে,
নদী পাড়ে মোর চোখেতে পরিলো পল্লীবালারে ঘাটে।

ভাবিলাম তব বাছার লাগি তারেই আনিবো ঘরে,
নাও ভিড়ায়ে গেলাম সে বাড়ি হাট করিবার পড়ে।

পানির ছলে বেয়াইর সাথে করিলাম যত বাত,
পর হপ্তায় বানাড়ীপাড়ায় পাঠায়ে দেই বরাত।

শুনিয়া বেয়াই সকল কিছু ঘটকের মুখেতে,
জনদশে নিয়া ছেলের বাড়ি আসিবে সে দেখিতে।

ঘটকের মুখে শুনিয়া সবই, তাই কুড়েঘর ক্ষয়ে,
ছাউনি দিলাম কাঠ পিটায়ে উপরেতে চাল দিয়ে।

আসিয়া বাড়িতে তোর নানাজান দেখিয়া সকল কিছু,
মেয়ে দিতে মোর ছোট্ট ঘরেতে হটিলনা আর পিছু।

ঘরেতে বসিয়া পিঠা,পায়েস আর রসের গোল্লা খেয়ে,
সবাই মিলিয়া কোলাকুলি করে পাকাকথা গেল দিয়ে।

পরের মাঘে নাও পালকিতে আনিলাম তারে বাড়ি,
দাদিজান তোর, বৌয়ের আঁচলে চাবি দিল গিট মারি।

বুড়ো মায়ে তোর, নাত বৌ পেয়ে খুশিতে যে আতখান,
বলে নাত বৌ পর মাঘে যেন কোলে আসে রূপবান।

সত্যি হইলো মায়ের কথাই মাঘের এক বিকালে,
পরী রানী যেন নামিয়া আসিলো পল্লীবালার কোলে।

প্রথম নাতনির মুখ দেখে তোর শ্রদ্ধেয়া দাদিজান,
আবেগানন্দে কোলেতে লইয়া ধরিল কতযে গান।

বুজিরে তোর, যাইতাম লয়ে কাঁধে নিয়ে হাটে কত,
কিনিয়া দিতাম মন ভরায়ে চুড়ি,ফিতা,টিপ যত।

কিছুদিন পর বুড়ো মা'য় তোর দিলো যে ওপার পাড়ি,
মা ছাড়া যেন খালি হয়ে গেল, আমার সোনার বাড়ি।

এমন করিয়া শোক ভুলিয়া পাঁচ ছয় সাল পরে,
বেহেস্ত তরী বাইয়া আসিলো রামধনু মোর ঘরে।

পূর্নিমা চাঁদ মুখ্খানি তার, দেখিয়া স্বজন সবে,
বলিল এবার স্বর্গের সুখ ঢালিয়া দিল যে রবে।

একদা বাড়িতে বড় কাজি এলো দুই প্রহরের পরে,
নিতে চায় তারা নাতনিরে মোর ছেলের বৌ-টি করে।

বুনিয়াদি বাড়ী, প্রস্তাব ভালো রাজি হইলাম তাই,
বুজিরে তোর দিলাম তুলিয়া দেড়'শ লোক খাওয়াই।

আরো দুই সাল কাটিয়া গেলে জ্বলিলো বংশ বাতি,
ঘর খানা মোর উজ্জল করে এসেছিলি তুই নাতি।

বলিতো মোরে দাদিজান তোর প্রতিরাতে জাগি জাগি,
রাজ কন্যা আনিবো এ ঘরে আমার নাতির লাগি।

সাঝের আগে আয়রে দাদু ঐ দিকে হেটে চলি,
সুখের সাথে দুঃখের কথাও একটুকু তোকে বলি।

দেখকি তুমি, ইট ঘেরা জমি ওটাই কবরস্থান,
ছেলে, মেয়ে, বৌ, নাতনিরে লয়ে ঘুমে তোর দাদিজান।

সবে চলে গেলো মাটির ঘরে মোরে আর তোরে ছাড়ি,
আয় দাদু আয়, তাদের কবরে ফাতেহা ক্বুলহু পড়ি।

দুই হাত তুলে দোয়া কর দাদু, "ওহে খোদা রহমান",
বেহেস্তবাসি করিও সকল মৃত্যু-ব্যাথিত প্রান।

আয় দাদু আয়, সকলের ঘর দেখাই এক এক করে,
চিনিতে যেন পারিস পরে যদি আমি যাই মরে।

" ঐখানে তোর দাদির কবর ডালিম গাছের তলে,
তিরিশ বছর ভিজায়ে রেখেছি দুই নয়নের জলে।"

২৬/০৪/২০১৫ইং



কোন মন্তব্য নেই

luoman থেকে নেওয়া থিমের ছবিগুলি. Blogger দ্বারা পরিচালিত.